গতকাল ৫ শ্রাবণ ছিলো গ্রামীণ সাংবাদিকতার পথিকৃৎ হরিনাথ মজুমদার বা কাঙাল হরিনাথের জন্মদিন। তিনি ঊনবিংশ শতাব্দীর বাংলা লোকসংস্কৃতির অন্যতম ধারক ও বাহক। তিনি বাউল সঙ্গীতের অন্যতম পথিকৃৎ ছিলেন। তিনি সর্বসমক্ষে ফকির চাঁদ বাউল নামেও পরিচিত ছিলেন।
সাংবাদিক কাঙাল হরিনাথ বাংলা ১২৪০ সালের (১৮৩৩ ইংরেজি) ৫ শ্রাবণ কুষ্টিয়া জেলার (তৎকালীন নদীয়া জেলা) কুমারখালী উপজেলার কুণ্ডুপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন।‘গ্রামবার্তা প্রকাশিকা’ নামের একটি মাসিক পত্রিকা প্রকাশ করেন। পত্রিকাটি পরে পাক্ষিক ও ১২৭৭ বঙ্গাব্দের বৈশাখ মাস থেকে এক পয়সা মূল্যের সাপ্তাহিকে রূপান্তরিত হয়। এতে সাহিত্য, দর্শন ও বিজ্ঞানবিষয়ক প্রবন্ধ প্রকাশিত হলেও কৃষকদের প্রতি তখনকার নীলকর ও জমিদারদের শোষণ-অত্যাচারের কথা বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করা হতো।
২০১৭ সালে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর কুষ্টিয়ায় তার স্মরণে “কাঙাল হরিনাথ জাদুঘর” প্রতিষ্ঠা করে।
খুব ছোটবেলায় তার পিতা-মাতা লোকান্তরিত হন। তার পিতার নাম হরচন্দ্র মজুমদার। বাল্যকালে কৃষ্ণনাথ মজুমদারের ইংরেজি স্কুলে কিছুদিন অধ্যয়ন করেন। কিন্তু অর্থাভাবে প্রাতিষ্ঠানিক বিদ্যাশিক্ষায় বেশীদূর অগ্রসর হতে পারেননি। তবে সারাজীবন অবহেলিত গ্রামবাংলায় শিক্ষাবিস্তারের জন্য ও শোষণের বিরুদ্ধে সংবাদপত্রের মাধ্যমে আন্দোলন করেছেন তিনি। বন্ধুদের সাহায্যে ১৩ জানুয়ারি, ১৮৫৫ সালে নিজ গ্রামে একটি ভার্নাকুলার বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন হরিনাথ মজুমদার। এরপর বেশ কিছুদিন ওই বিদ্যালয়েই বিনাবেতনে শিক্ষকতার করেন। পরবর্তীকালে তারই সহায়তায় ২৩ ডিসেম্বর, ১৮৫৬ সালে কৃষ্ণনাথ মজুমদার কুমারখালিতে একটি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন।
অত্যাচারিত, অসহায়, নিষ্পেষিত কৃষক-সম্প্রদায়কে রক্ষার হাতিয়ারস্বরূপ সাংবাদিকতাকেই পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন হরিনাথ মজুমদার। অল্পশিক্ষা প্রথমে সংবাদ প্রভাকর পত্রিকায় লিখতেন। প্রাচীন সংবাদপত্র হিসেবে বিবেচিত সংবাদ প্রভাকর পত্রিকাটি এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
পরবর্তীকালে ১৮৬৩ সালের এপ্রিল মাসে কুমারখালি এলাকা থেকে গ্রামবার্তা প্রকাশিকা নামে একটি মাসিক পত্রিকা প্রকাশ করেন তিনি।
সে সময় কলকাতা ছাড়া কোথাও মুদ্রনযন্ত্র ছিল তাঁর জীবনে কখনো সচ্ছলতা ছিল না। কিন্তু তা সত্ত্বেও পত্রিকা প্রকাশের সুবিধার্থে তিনি ১২৯২ বঙ্গাব্দে (১৮৭৩ ইংরেজি) একটি ছাপাখানা (মুদ্রনযন্ত্র) স্থাপন করেন। ১২৯২ বঙ্গাব্দের আশ্বিনে (১৮৮৫ ইংরেজি) পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যায়।
ছাপাখানাটি এতদিন তাঁর বংশধরদের কাছে থাকলেও বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর কতৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তির পর গতকাল থেকে এখন এটি “কাঙাল হরিনাথ জাদুঘর” থাকছে।
বাংলাদেশে আমরা যারা সাংবাদিক, তারা একবার কুষ্টিয়ার কুমারখালী গিয়ে “কাঙাল হরিনাথ জাদুঘর” দেখে আসা ভালো। তাহলে নিজের শেকড়ের অস্তিত্ব অনুভূত হবে।
#লেখক, সাংবাদিক -তানভীর আলাদিন