গত ১৫ আগস্ট রাজধানী ঢাকার কামরাঙ্গীরচর থানাধীন কোম্পানীঘাট জামাল দেওয়ানের গলি এলাকায় মেহেরুন নেছা মীম (১৮) নামের এক গৃহবধুকে তার স্বামী কর্তৃক শ্বাসরোধ করে হত্যার ঘটনা ঘটে। হত্যাকান্ডের পর ভিকটিম মীম এর পরিবারের লোকজন মীমকে তাদের বাথরুম হতে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন। এই ঘটনার পর ভিকটিম মীম এর মামা মোঃ কামাল (৪৮) বাদী হয়ে ভিকটিম এর স্বামী সোহেল মিয়া (২৮) এর বিরুদ্ধে কামরাঙ্গীরচর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং- ২৯, তারিখ- ১৫/০৮/২০২৩ খ্রিঃ, ধারা- ৩০২ দন্ড বিধি।
ইতোমধ্যে হত্যাকান্ডটি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে গুরুত্ব সহকারে প্রচারে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। হত্যাকান্ডের বিষয়টি জানতে পেরে র্যাব বর্ণিত ঘটনার ছায়া তদন্ত শুরু করে ও আসামীকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।
এরই ধারাবাহিকতায় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ও তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় র্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল গতকাল ১৬ আগস্ট গাজীপুর জেলার সদর থানাধীন সালনা ইপসা উত্তর মোল্লাপাড়া এলাকায় একটি অভিযান পরিচালনা করে ঢাকার কামরাঙ্গীরচরে চাঞ্চল্যকর স্বামী কর্তৃক গৃহবধুকে হত্যাকান্ডের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হত্যাকারী ভিকটিমের স্বামী সোহেল মিয়া (২৮) কে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত সোহেল শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী থানার পাঁচগাঁও গ্রামের দুলাল মিয়ার ছেলে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামী হত্যাকান্ডের সাথে তার সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে বলে জানায় র্যাব।
সোহেল আরও জানায়, তার সাথে ভিকটিম মীম এর ৩ বছর পূর্বে বিয়ে হয়। তাদের সংসারে ২ বছরের একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। সোহেল ও মীম উভয়ই স্থানীয় একটি মেটাডোর পিন পয়েন্ট কলম ফ্যাক্টরীতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করত। সোহেল প্রায়ই মীমকে পরপুরুষ এর সাথে ফোনে কথা বলত বলে সন্দেহ করতে থাকে এ নিয়ে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য শুরু হয়। যার ফলে সোহেল প্রায়ই ভিকটিম মীমকে মারধর করত। সোহেল এর নির্যাতনের কারণে মীম ইতোপূর্বে শেরপুর আদালতে সোহেল এর বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করে। অতঃপর মীম তার স্বামীর নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে হত্যার ২ মাস পূর্বে তার স্বামীর বাড়ী ছেড়ে তার নানির বাড়ী রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর থানাধীন জামাল দেওয়ানের গলি এলাকার একটি ভাড়া করা বাসায় চলে আসে এবং সেখানে মীম তার মা ও নানীর সাথে বসবাস করতে থাকে।
হত্যাকান্ডের ১০/১২ দিন পূর্বে সোহেল পূর্বপরিকল্পিতভাবে মীমকে হত্যার উদ্দেশ্যে মীম এর নানির বাসায় আসে এবং সে মীমকে আর কখনও কোন প্রকার নির্যাতন করবেনা বলে মীম ও তার পরিবারকে কথা দিয়ে উক্ত নানির বাসায় বসবাস করতে থাকে সেইসাথে মীমকে হত্যার সুযোগ খুঁজতে থাকে। পরবর্তীতে গত ১৫ আগস্ট দুপুর ১ টার দিকে সোহেল বাথরুমে গিয়ে ভিকটিম মীমকে ডেকে বলে যে, তার কোমরের পিছনে গুপ্ত স্থানে একটি বিষফোঁড়া উঠেছে এই বলে কৌশলে ভিকটিম মীমকে বাথরুমে নিয়ে গিয়ে পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক নৃশংস পাশবিকভাবে গলা টিপে শ্বাসরোধ করে হত্যা নিশ্চিত করে ঘটনাস্থল হতে পালিয়ে যায়।
গ্রেফতারকৃত আসামীকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।