আগেকার দিনে দাদী – নানীরা রূপচর্চায় যে হলুদ বাটা, দুধের সর, শসা বাটা, পেঁপের কথা বলেছিলেন, এগুলো হলো ত্বকের যত্নে সনাতনী পদ্ধতি বা ফেস প্যাক। এগুলো ত্বকের ডীপ ক্লিনজিংয়ের সাথে সাথে ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে, দাগ কমিয়ে আনে, ত্বক উজ্জ্বল করে ও ত্বকে বলিরেখা পরতে বাধা দেয়। কিন্তু একেক জনের ত্বক একেক ধরনের। তাই বলে দাদী – নানীকে যা স্যুট করেছে, তা আমার আপনার ত্বকে উপযোগী নাও হতে পারে। এখন কসমেসিউটিক্যাল নানা ধরণের ফেস মাস্ক পাওয়া যায়। আপনি আপনার ত্বকের ধরন বুঝে পছন্দ মত মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন। এক্ষেত্রে ত্বক বিশেষজ্ঞ আপনাকে সাহায্য করতে পারেন। জেনে নেই মাস্কের প্রকারভেদ ও কাজ। এই বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের প্রখ্যাত ডার্মাটোলজিস্ট ডা: তাওহীদা রহমান ইরিন।
প্রথমেই প্রশ্ন আসতে পারে ফেস মাস্ক কি যে কেউ ব্যবহার করতে পারে ? এক্ষেত্রে আমার উত্তর – অবশ্যই পারে, তবে ব্যবহারের আগে বুঝে নিতে হবে আপনার স্কিন টাইপ, আপনার বয়স আর কোন স্কিন কনসার্নে ব্যবহার করতে চান। ফেস মাস্কে যে অ্যাকটিভ উপাদানগুলো থাকে সেগুলোর উপর ভিত্তি করেই স্কিন এক্সপার্টরা নির্ধারণ করে থাকেন কোন মাস্কটি কার জন্য উপযোগী। যেমন ত্বক খুব সেনসিটিভ হলে ওটস, কোকোনাট ওয়াটার যুক্ত মাস্ক একটা সুদিং ইফেক্ট দেয় ও ত্বক মসৃণ রাখে। যাদের ত্বক তৈলাক্ত, তারা ভিটামিন ডি ৩, ল্যাকটিক এসিড, আলফা হাইড্রক্সি এসিড, গ্রিন টি যুক্ত মাস্কগুলো ব্যবহার করে ত্বকের অতিরিক্ত তৈলাক্ত ভাব কমিয়ে এনে, ব্রনের দাগ দূর করে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে পারেন। আর চারকোল ক্লে মাস্ক ডীপ ক্লিনজার হিসেবে কাজ করে, ব্ল্যাকহেডস দূর করে। একে স্কিন ডিটক্স মাস্কও বলা হয়।
এখন বলছি ড্রাই স্কিনের জন্য মাস্কের বিষয়ে। এক্ষেত্রে মাস্ক কেনার আগে দেখবেন যে হায়ালুরনিক এসিড, সিরামাইড, অর্গ্যানিক অয়েল, ডাইমেথিকন, গ্লাইসেরিন এই উপাদানগুলো আছে কি না। এগুলো ত্বককে হাইড্রেট, ময়েশ্চারাইজ, নারিশ এবং ব্রাইট করবে। স্বাভাবিক ত্বক যাদের, তাদের জন্য সুখবর হলো, তাদের জন্য অপশন অনেক। মধু, রাইস ওয়াটার, নানাবিধ ফ্রুট এন্ড প্ল্যান্ট এক্সট্রাক্ট যেমন পেঁপে, তরমুজ, আলু, ডালিম, আনারস, অ্যাভোগ্যাডো, কলা, হলুদ, অ্যালোভেরা, শসা এগুলো নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারেন। এন্টি অক্সিডেন্ট, গ্রোথ ফ্যাক্টর, রেটিনল, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, হায়ালুরনিক এসিড এবং ডাইমেথিকন যুক্ত মাস্কগুলো ত্বকের দৃঢ়তা বৃদ্ধি করে, বলিরেখা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। যারা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে চান বা ত্বকে কোনো ধরণের দাগ থাকলে সেগুলো কমাতে চান, তারা গার্ডেন ক্রেস স্প্রাউট, সোডিয়াম হায়ালুরনেট, আলফা আরবুটিন, ট্রানেক্সামিক এসিড, ভিটামিন বি ৩ এই উপাদান যুক্ত মাস্কগুলো ব্যবহার করতে পারেন।
স্লিপিং মাস্ক :
ডেইলি স্কিন কেয়ার রুটিনের শেষ ধাপ এই স্লিপিং মাস্ক। এটি মাস্কের নতুন সংযোজন। যারা একটু সময় বাঁচাতে চান, একই সাথে নাইট রিপেয়ার ক্রিম এবং মাস্কের ইফেক্ট পেতে চান তাদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি। ঘুমের ঠিক আগে মুখ পরিষ্কার করে মুখে ও গলায় অল্প পরিমাণ মাস্ক বুলিয়ে নিন এবং সকালে ফেস ক্লিনজার ও পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি জেল, ক্রিম ফর্মুলাতে পাওয়া যায়। কিছু কিছু মাস্ক প্রতি রাতেই এবং কিছু মাস্ক সপ্তাহে ৩ দিন ব্যবহার করা যায়।
শিট মাস্ক :
যারা খুব জলদি ত্বকের জেল্লা চাচ্ছেন বা ট্রাভেল করছেন, এই সময় এই শিট মাস্কগুলো খুবই সহজ সমাধান। দিনে রাতে যে কোনো অনুষ্ঠানের আগে, মেক আপের আগে খুব সহজেই ব্যবহার করা যায় শিট মাস্ক। মুখ ভাল করে ধুয়ে এই মাস্কটি স্প্রেড করে ১০ বা ১৫ মিনিট পর উঠিয়ে ফেলুন এবং পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। কোনো কোনো ফেস মাস্ক ব্যবহার করলে পানি দিয়ে ধোয়ার প্রয়োজন হয় না। সাধারণত শিট মাস্ক পেপার, কটন এবং তার সাথে একটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট দিয়ে তৈরি। এস্থেটিক ক্লিনিকগুলোতে রিজেনারেটিভ ট্রিটমেন্টের পরে শিট মাস্ক ব্যবহার করা হয়।
পিল অফ মাস্ক :
একে এক্সফোলিয়েটিং মাস্কও বলা হয়। নির্দিষ্ট পরিমাণ মাস্ক হাতের আঙ্গুলে নিয়ে পুরো মুখে ও গলায় স্প্রেড করতে হয়। ১০-১৫ মিনিট অপেক্ষা করার পরে একটি পাতলা আবরণের মত উঠে আসে সাথে নিয়ে আসে জমে থাকা তেল, ময়লা, ডেড সেল, ব্ল্যাকহেডস। এটি সপ্তাহে একদিন বা মাসে দু’দিন ব্যবহার করা উচিত। ঘন ঘন ব্যবহারে ক্ষতি হতে পারে, ওপেন পোর বাড়তে পারে।
বাবল মাস্ক :
অন্যান্য ফেস মাস্ক বা ক্রিমের মত মুখে অ্যাপ্লাই করার ১০ মিনিট পরে সারা মুখ জুড়ে বুদবুদে ফেনায় পরিণত হয়। অনেকটা অক্সি ফেসিয়ালের মত। স্পা এস্থেটিক সেন্টারে বাবল মাস্ক বেশ জনপ্রিয়।