রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার বসিলা গার্ডেন সিটি হাউজিং এলাকায় শুক্রবার সন্ধ্যায় সশস্ত্র মহড়া ও পরপর বেশ কয়েকটি ছিনতাইয়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সশস্ত্র ছিনতাইকারীদের হামলায় কয়েকজন আহতও হয়েছেন।ভুক্তভোগী ও স্থানীয়দের অভিযোগ, শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যার ঘটনাটি ছিল একেবারেই ব্যতিক্রম। সেদিন গণহারে ছিনতাই ঘটে। দলবদ্ধ ছিনতাইকারীরা সংঘবদ্ধ হয়ে প্রকাশ্যে একের পর এক ছিনতাই করেছে। সামনে যাদের পেয়েছে তাদের কুপিয়ে সঙ্গে থাকা সবকিছু ছিনিয়ে নিয়েছে। ছিনতাইসহ রাস্তার পাশের ১৫ থেকে ২০টি দোকানের মালামাল লুটপাট ও ভাঙচুর চালিয়েছে।এ ঘটনার একাধিক সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পাওয়াগিয়েছে। এ ঘটনায় তোলপাড় চলছে পুরো মোহাম্মদপুর এলাকায়। অভিযোগ উঠেছে থানা পুলিশের ভূমিকা নিয়েও।
ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করে বলেন, বসিলা এলাকায় দিনে ও সন্ধ্যায় প্রায়’ই চুরি-ছিনতাই’র ঘটনা ঘটে। কিন্তু পুলিশি টহল লক্ষ্য করা যায় না। শুক্রবারের ছিনতাইয়ের ঘটনার সময় জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ ফোন করেও তাৎক্ষণিকভাবে ভুক্তভোগীরা পুলিশের সহায়তা পাননি বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের । ৯৯৯-এ ফোন করার প্রায় চার ঘণ্টা পর পুলিশের একটি টহল গাড়ি এলেও ঘটনার বিষয়ে তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলে দাবি করেন ভুক্তভোগীরা।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বসিলা গার্ডেন হাউজিং এলাকায় ছিনতাই নতুন কোনো ঘটনা নয়। তবে শুক্রবার সন্ধ্যার ঘটনাটি অভূতপূর্ব। তারা হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলেন। ৩০ থেকে ৪০ জনের একটি দল অস্ত্রহাতে বসিলা বাজারের সামনে থেকে ছিনতাই শুরু করে। মহড়া ও ছিনতাই শেষ হয় অন্তত দুই কিলোমিটার দূরে চন্দ্রিমা হাউজিং এলাকায়। এর মধ্যে পথচারী, নদীর পাশের ওয়াকওয়েতে হাঁটতে আসা দর্শনার্থীদের মোবাইল ফোন ও টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনাও ঘটে।
ভুক্তভোগী নীরব বলেন, কাজ শেষে চায়ের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলাম। এ সময় এক ছেলে এসে ঘাড়ে চাপাতি ধরে মোবাইল ফোন চায়। দিতে না চাওয়ায় আমাকে মারধর করে। মাথায় আঘাত করে, পায়েও কোপ দেয়। পরে মোবাইল নিয়ে গেছে। এ সময় আমার বন্ধুকেও মারধর করে। এমনকি কোমরের বেল্ট দিয়ে পেটায়।
নির্মাণশ্রমিক জাহিদুল ইসলামসহ আরও দুজন ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন। ছিনতাইকারীরা জাহিদের মাথায় কোপ দিয়েছে। পরে তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নেওয়া হয়। তার মাথায় ছয়টি সেলাই লেগেছে।
শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বুড়িগঙ্গা নদীর পাশে ওয়াকওয়েতে হাঁটতে গিয়ে ছিনতাইকারীদের হামলার শিকার হন চন্দ্রিমা হাউজিং এলাকার বাসিন্দা নুসরাত আফরিন। তিনি বলেন, শুক্রবার আমি বাসার পাশে ওয়াকওয়েতে হাঁটতে যাই। হঠাৎ কয়েকটা ছেলে এসে ঘিরে ধরে। গলায় অস্ত্র ধরে বলে, মোবাইল ফোন আর টাকা দিতে। পরে একজন আমার ব্যাগ খুলে মোবাইল নিয়ে যায়। কিন্তু টাকা না থাকায় আমার শরীরে তল্লাশি করার চেষ্টা করে। এর মধ্যে আমার পা ও পিঠে অনেকগুলো আঘাত করে। মোবাইল নিয়ে যাওয়ার পর একজন এসে লক খুলে দিতে বলে। তখন আমি দৌড় দিলে, আমার কপালে ও হাতে কোপ দেয়।
পুলিশের সহযোগিতা পাননি অভিযোগ করে আফরিন বলেন, থানায় গিয়ে ঘটনা খুলে বলার পরও আমাকে দীর্ঘ সময় বসিয়ে রাখে। পরে একটা কাগজে অভিযোগ লিখে নেয়। কিন্তু সেটা জিডি না অভিযোগ আমি বুঝতে পারছি না।
রোববার (১ অক্টোবর) মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহফুজুল হক ভুঞা গনমাধ্যম কে বলেন, কিশোর গ্যাং সদস্যরা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে জানতে পেরেছি। সন্দেহভাজন কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের ঘটনা সম্পর্কে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ভুক্তভোগী আরও কয়েকজন থানায় একসঙ্গে এলে মামলা নেওয়া হবে। ৯৯৯-এ ফোন করেও পুলিশি সহায়তা পাননি ভুক্তভোগীরা। এমন অভিযোগের বিষয়ে ওসি বলেন, এই অভিযোগ ভিত্তিহীন। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। ফুটেজ দেখে জড়িতদের শনাক্ত করা হচ্ছে।